ব্লগ আর্কাইভস

ভাগ্যের পূর্বনির্ধারণ ও মুক্ত ইচ্ছা কি সাংঘর্ষিক? -২

[প্রথম পর্ব অবশ্য পাঠ্য যারা পড়েননি বা ভুলে গেছেন তাদের জন্য]

পূর্বের আলোচনায় আমরা কিছু প্রারম্ভিক আলোচনা সেরে নিয়েছিলাম। এবার তাই আমরা সরাসরি ভাগ্যের পূর্বনির্ধারণের বিষয়টির ইসলামিক বিশ্লেষণে চলে যেতে পারি।

ক্বদরের সংজ্ঞা  ও ইসলামে এর গুরুত্ব

ভাগ্যের পূর্বনির্ধারণ বলতে আমরা এতক্ষণ যা বলছিলাম তাকে ইসলামি পরিভাষায় ক্বদর (القدر) বলা হয়। ক্বদরের প্রসঙ্গ ক্বুরআন ও হাদীসে বহুবার এসেছে। আল্লাহ্‌ ক্বুরআনে বলেনঃ

নিশ্চয়ই প্রতিটি জিনিসকেই আমি সৃষ্টি করেছি ক্বদর দিয়ে[1]

আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ)-কে জিবরীল (আঃ) ছদ্মবেশে এসে জিজ্ঞেস করেছিলেন ঈমান কী? তিনি জবাবে বললেনঃ

(ঈমান হলো) যে তুমি বিশ্বাস করবে আল্লাহ্‌র ওপর, তার ফেরেশ্তাকূলের ওপর, তার কিতাবসমূহের ওপর, তার রাসূলদের ওপর, শেষ দিবসের ওপর ও (আরো) বিশ্বাস করবে ক্বদর ও তার ভালো-মন্দের ওপর[2]

ইমাম ইবন হাজার আল-‘আসক্বালানী[3] ক্বদরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেনঃ এর অর্থ হলো আল্লাহ্‌ তাআলা সব জিনিসেরই পরিণতি/ভাগ্য সম্বন্ধে জানেন তাদের আবির্ভাবের পূর্বেই। অতঃপর তিনি অস্তিত্ব দিলেন তার যা সেই পূর্ব জ্ঞান অনুসারে অস্তিত্বপ্রাপ্ত হওয়ার কথা। প্রতিটি সৃষ্ট বস্তুই আগত হচ্ছে তার (আল্লাহ্‌র) জ্ঞান, ক্ষমতা ও ইচ্ছে থেকে[4] Read the rest of this entry

ভাগ্যের পূর্বনির্ধারণ ও মুক্ত ইচ্ছা কি সাংঘর্ষিক? – ১

দ্বিতীয় পর্ব

ক’বছর আগে আমার এক আত্মীয়া আমাকে বেমক্কা বলে বসলেন যে, “এমন একটি প্রশ্ন আছে যার উত্তর পৃথিবীর কোন ‘ইমাম’-ই দিতে পারবে না”। কী সেই মহার্ঘ প্রশ্ন জানার আগ্রহ হল। তিনি বললেন, “আল্লাহ্‌ যদি সব আগে থেকেই ঠিক করে রাখেন তাহলে আমাদের ভালো-মন্দ সব কাজও তো তারই নির্ধারিত, তাহলে আর আমরা কেন দায়ী হচ্ছি”? আমি তাকে বলতে চাইলাম যে এ প্রশ্নটি ইসলামি ‘আক্বীদা শাস্ত্রে বহুল চর্চিত ও পঠিত একটি বিষয় এবং পৃথিবীর বেশিরভাগ ‘ইমাম’-এরই তা জানা থাকার কথা। তিনি আমার কথা একপ্রকার উড়িয়েই দিলেন। ‘পৃথিবীর সব ইমাম’-দের সম্পর্কে তার এত টনটনে জ্ঞান যে সেখান থেকে তাকে বিচ্যুত করা সময়ের বৃথা অপচয় মনে হলো।

আমার এই আত্মীয়ার মত আরো বহু লোককে দেখেছি এই প্রশ্নটি করে “হুজুরকে কাত করা গেছে” গোছের মুচকি হাসি দিতে। অনেকের কাছেই এই ব্যাপারটি একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন যা অন্ধ বিশ্বাসের কৌটোতে ভরে রাখা ছাড়া গত্যন্তর নেই। এই লেখাটিতে আমি আপনাদের সামনে ব্যাপারটির একটি ব্যাখ্যা  উপস্থাপন করতে ইচ্ছুক। দুই পর্বে আমি এই কাজটি করব। প্রথম পর্বে আমার চেষ্টা থাকবে এই বিষয়টি বোঝার আগে কিছু প্রিওরি (priori) দাঁড় করাতে। এতে করে একজন পাঠক আল্লাহ্‌ চান তো সমস্যাটির স্বরূপ বুঝতে সমর্থ হবেন। দ্বিতীয় পর্বে আমি বিষয়টির ইসলামি শাস্ত্রগত ব্যাখ্যা তুলে ধরব যা এই আলোচনার পোস্টেরিওরি (posteriori) হিসেবে কাজ করবে। দুটি পর্ব একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। তাই পাঠকের কাছে অনুরোধ রইল দুটি লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ে তবেই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে। Read the rest of this entry