Category Archives: Etiquettes & Manners

আমার কাজে লাগবে এমন কিছু কু’রআনে আছে কি?

কু’রআন সম্পর্কে একটি প্রচলিত ধারণা হল এটি একটি উচ্চ মার্গের ধর্মীয়, নৈতিক, ঐতিহাসিক বই, যাতে মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় বড় জটিল ব্যপারগুলোই শুধুমাত্র বলা আছে। দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে এমন সাধারণ ব্যপারগুলোর জন্য কু’রআন নয়। যেমন আমরা কিভাবে কথা বলব, কিভাবে বেড়াতে যাবো, কি ধরণের কাপড় পরব – এসব খুঁটিনাটি ব্যপারের জন্য কু’রআন নয়। এই ধারণার কারণে অনেকেই কু’রআন থেকে না শিখে আনুসঙ্গিক কিছু ধর্মীয় বই, মনীষীর জীবনী ইত্যাদি পড়ে অনেক সময় নানা ধরণের বিতর্কিত উপদেশ শিখে বিভ্রান্ত হয়ে নিজের, পরিবারের, সমাজের ক্ষতি ডেকে আনেন; যেখানে কিনা স্বয়ং আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ করেছেনঃ Read the rest of this entry

জনপ্রিয় লেখকের মৃত্যু ও আমাদের গোয়েন্দাগিরি

বাংলাদেশে সম্প্রতি অতি জনপ্রিয় একজন লেখক মৃত্যুবরণ করেছেন। আপনারা সবাই তার নাম জানেন বলাই বাহুল্য। আমি তার নাম উল্লেখ করছি না কারণ আমি চাইনা যে পাঠকের দৃষ্টি বা মন লেখার মূল পয়েন্টের বাইরে পড়ে থাকুক। এই টেকনিক কতটা কাজে আসবে বুঝতে পারছি না। কারণ হুজুগে বাঙ্গালি বাস্তবিকই হুজুগের বাইরে মনঃসংযোগ করতে পারে না – এটা আমার দীর্ঘদিনের উপলব্ধি। আশা করি এই লেখাটি পড়ার সময় পাঠক তার হুজুগেপনাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন। সংযমের মাসে এটা খুব কষ্টসাধ্য হওয়ার কথা নয়।

লেখকের মৃত্যুর পর আমি খেয়াল করলাম যে দু’দল মানুষ তার ধর্মীয় ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন। একদল তার ইতিহাস ঘেঁটে তার ‘মুনাফিকী’র ফিরিস্তি বের করে নিয়ে এসেছেন। আরেকদল পারলে শাহজালালের মাজারের মত আরেকটি মাজার বসিয়ে দেন তার কবরের ওপর। লেখকের কাজের সাথে আমার পরিচয় আছে। তার ধর্মীয় চিন্তা আমাদের প্রচলিত সমাজ ও তার ধ্যান-ধারণারই প্রতিফলন। সময়ে সময়ে তার লেখায় ইসলামি মূল্যবোধের প্রতি ভালোবাসা যেমন প্রকাশ পেয়েছে তেমনি বিভিন্ন কাজে তার ইসলামি বিষয়সমূহে ভুল ধারণা ও অজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ তো আর রোবট নয়, রক্ত মাংসের মানুষের যেমন ঈমান ওঠা নামা করে তার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। পার্থক্য একটিই, তিনি জনপ্রিয় লেখক বলে তার ধ্যান-ধারণা আমজনতার বিকেলের নাস্তার খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমরা যারা ইসলামমনা তাদের একটি বড় দায়িত্ব ছিল লেখকের ভুল-ভ্রান্তি তার জীবদ্দশায় ধরিয়ে দেয়া। সেটা যখন আমরা করতে পারিনি তখন তার মরদেহকে  জান্নাত বা জাহান্নামে পাঠানোর পবিত্র দায়িত্ব আমাদের নেয়ার দরকার নেই। এর জন্য বেটার অথরিটি আছে, আমাদের এত উতলা হওয়ার প্রয়োজন কী? তার পারলৌকিক পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের অতিরিক্ত মাথা ঘামানো আমাদের হুজুগেপনার কফিনে আরেকটি পেরেক। এটি শেষ পেরেক নয়। শেষ পেরেক অনেক আগেই কফিনে বসে গেছে। তার পরেও আমরা পেরেক ঠুকেই চলেছি! Read the rest of this entry

How to not let our ego get too big or our intentions clouded

While the 21st century has come with attacks upon Islam like never before, the numbers of energetic and enthusiastic young people coming towards Islam has dramatically risen. Muslim youth in the darkness of the life of this world suddenly came to find the light of Islam, and those shielded from faith itself are accepting Islam today at a rate never seen before. For all this we say Alhamdulillah.

However, to rest on our laurels and pat on our back would be a grave error, and indeed more so because our arch enemy – Shaytan – is constantly plotting and planning. And among his biggest tricks to deceive the young da’ee or the young student of knowledge is to let his ego inflate and make him arrogant and to cloud his intentions. When people question these brothers and sisters about Islam, and they show a real “know-it-all” attitude, looking down upon the people and always trying to prove their point by hook or by crook. Arrogance slowly leads to clouding of the intentions whereby the brother or sister is no longer learning and preaching for the sake of Allah but rather they are learning and preaching for the sake of winning arguments, for the sake of defeating their opponents and to prove the fact that they have “more knowledge”. Hence one will see many of them knowing lots about minor issues in Islam on which there is difference of opinion so that he can debate with others and put them down and yet many of the fundamentals of Islam he has no clue of them. One will see them also looking down upon and criticizing scholars and other preachers and in no way, shape or form accept criticism or correction. This, brothers and sisters, is disaster! Read the rest of this entry

একটি শিশুর ভাবনা আর আমাদের রমযান মাস

একটু ভেবে দেখুন আপনার আশেপাশে যদি কোন শিশু থাকে তাহলে সে সারাদিন কি করে। সে খুব খুশি থাকে আশেপাশের সব ব্যাপার নিয়ে, এটা-সেটা ধরতে চায়। খুব কৌতুহলী কি করছে তার মা রান্নাঘরে। আর খাওয়ার টেবিলে ডালের থালা ধরে টান দেওয়ার জন্য ক্লান্তহীন চেষ্টা। ব্যাপারটাকে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেছি একজন লেখকের একটি বক্তব্যের সাথে, তার মতে একটি শিশুর কাছ থেকে একজন বয়স্কের তিনটি জিনিস শেখার আছে।

১। খুশি হওয়া যে কোন কারণে (To be happy for no reason):

আমাদের খুশি হওয়া উচিত, কারণ এত সুন্দর একটি মাস আর এই মাসে এত মহিমাময় এক রাত্রি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের উপহার দিয়েছেন। সূরা কদর এর দুটি আয়াত উল্লেখ করলাম –

“শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন?” – وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ
“শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ” – لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ

আর এই মাসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা জান্নাতের সমস্ত দরজা খুলে দেন এবং বান্দাদের উপর রহমত বর্ষিত করতে থাকেন। আর এত কষ্ট করে একমাস পালন শেষে ঈদুল ফিতর যা এমন এক খুশির দিন, যে দিন ছোট-বড় আর ধনী-গরীব সবাই একসাথে আনন্দে মেতে উঠে। একবার একটু উপলব্ধি করুন যে এত সুন্দর উপহারগুলো আপনি অন্য কোনও মাসে পেয়েছেন কিনা। শিশুরাতো যে কোন কারণে খুশি হয়, কিন্তু আপনার কাছে রমযানের আগমনে খুশি হওয়ার অনেক কারন আছে। এই হাদিসটি পড়লে আপনার খুশি আরও কয়েক ডিগ্রী বেড়ে যাবে –

সাহল বিন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: Read the rest of this entry

জীবন আর সিনেমার খতিয়ান

সাহাবীদের ব্যাপারটি অদ্ভুত। আমি নিশ্চিত যখন সাহাবীদের কথা বলা হয় তখন অনেকেরই মনের মাঝে কিছু অতিমানবের চিত্র রূপায়িত হয়। তারা অসাধারণ ছিলেন কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা কি ঠিক অতিমানব ছিলেন? আমাদের হিরো ওয়ার্শিপের যুগে অতিমানবের কনসেপ্ট খুব চালু রয়েছে। এই অতিমানবদের তালিকা অতি দীর্ঘ – কবি, রাজনীতিক, বিজ্ঞানী, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কী নেই তাতে? অতিমানব বলতে আমি তাদের বোঝাচ্ছি যাদের ভালো দিকগুলোকে ফুঁলিয়ে ফাঁপিয়ে বটগাছ বানানো হয় এবং নেতিবাচক দিকগুলোকে দেখেও না দেখার ভান করা হয়। কারণ তাদের প্রতি ভক্তদের ভালোবাসা এতই অন্ধ যে খারাপ যেকোন দিক সহজেই বাইপাস করে যেতে পারে।

সাহাবীদের গল্প পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে হোঁচট খাওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের কাউকে কাউকে আপনি এমন কাজ করতে দেখবেন যা হয়তো সাহাবীগণ দূরে থাকুন, যেকোন ধার্মিক মুসলিমের কাছেও আমরা প্রত্যাশা করি না। এই দেখবেন যে কেউ হয়তো আচমকা মদ খেয়ে বসেছেন। আবার দেখবেন কেউ হয়তো ব্যাভিচারের মত জঘন্য কাজেও পা দিয়ে ফেলেছেন। কেউ কেউ এমন মারাত্মক প্র্যাক্টিকেল জোক করে বসছেন যা করার কথা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। একজন সাহাবী গোপনে মদীনা থেকে মক্কার ক্বুরায়শদের কাছে মুসলিমদের যুদ্ধাব্যাবস্থার প্ল্যানও ফাঁস করে দেওয়ার উপক্রম করেছেন! আমাদের সময়ে কেউ এমনটি করলে ফাঁসির দড়ি এড়ানো খুবই মুশকিল হয়ে যেত।

ঘুণাক্ষরেও ভাববেন না যে আমি তাদের প্রতি কোন বিদ্বেষ পুষে রেখে এসব বলছি। আল্লাহ্‌ আমাকে তেমন দূর্বৃত্তিপনা থেকে নিষ্কৃতি দিন! আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি তারা হচ্ছেন পৃথিবীর বুকে পা রাখা মানুষদের মাঝে শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) নিজে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে গেছেনঃ “মানুষদের মাঝে শ্রেষ্ঠ হল আমার প্রজন্ম”। অর্থাত সাহাবীরা। হাদীসটি বুখারীতে এসেছে। Read the rest of this entry

আমাদের সময়ের অংশীদারঃ ২ – প্রিয় ফ্রেন্ড সার্কেল এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট

প্রথম পর্বটি পড়ে হয়ত আপনাদের মনে হতে পারে বেশ উপদেশমূলক কথা বলে ফেলেছি। সত্যি বলতে আপনি এখন যেভাবে আপনার সন্তানের সাথে আচরণ করছেন তার প্রভাব তার মধ্যেও পড়ছে এবং তা আপনি দেখতে পারবেন যখন সে কিশোর বা যুবক হয়ে উঠবে তখন। তাই বলে আমি বলছিনা আপনার মা-বাবার সাথে আপনি সে রকম ব্যবহার করবেন যেভাবে তিনি আপনার সাথে করেছেন। শুধু মা-বাবা কেন আমাদের সবার সাথেই উত্তম ব্যবহার করা উচিত।

আমি এই পর্বে মুদ্রার অপর দিকটি তুলে ধরতে চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। সন্তানরা তাদের মা-বাবার সাথে কিভাবে সময় ব্যয় করে থাকে, আর বুঝাতে চেষ্টা করব কেমন ব্যবহার করা প্রয়োজন।

ফেসবুকের একটা আপডেট পড়ুন – “I’m worried 4 my mom because she is hospitalized nd I’ve not seen her fm last 1 week”. এটা আমার এক বন্ধুর আপডেট, আর দুঃখের ব্যপার হল সে আমার পাশে বসে এই আপডেট দিয়েছে যখন তার মা শয্যাশায়ী। কারও মা-বাবা যখন অসুস্থ থাকে তখন সে কেমন করে ফেসবুকে বসে এইসব আপডেট দিয়ে অযথা সময় নষ্ট করতে পারে তা আমার বুঝে আসেনা! আমি তাকে বললাম – “তুই এখানে কি করছিস? আমাদের সাথে বসে আড্ডা আর ফেসবুকে আপডেট দিচ্ছিস, ছিঃ সুমন খুব খারাপ ব্যপারটা। আন্টির কাছে যা; কাছে থাকলে উনার ভাল লাগবে, সাহস পাবে।” তার উত্তরটি ছিল এরকম – “আম্মার কাছে গিয়ে আমি কি করব। বাসার অন্যান্যরা আছে ওখানে; আর হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্স তো আছেই ইমারজেন্সির জন্য।” আল্লাহু আকবর। Read the rest of this entry

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি – ৪ (তাহাদের কথা)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

আগের পর্ব লিখেছিলাম আমাদের অতিরিক্ত ইতিবাচক দিক নিয়ে। আজ লিখবো অত্যন্ত নেতিবাচক দিক নিয়ে। এই সমাজকে আমরা আমাদের কলুষতা থেকে ক্ষান্ত দেইনি। আমরা আমাদের নোংরামি নিয়েও কথা বলতে চাই। অন্ধ হলে কি আর প্রলয় বন্ধ থাকে? লেখাটি নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ – দুর্বল মনের মানুষের জন্য অনুপযুক্ত।

অন্যায় যে করে

গত শনিবারের দুপুরের কথা। সরাকারী ছুটির দিন ধানমন্ডি এলাকায় এইচএসবিসি অফিসের পাশে এক রিক্সাওয়ালা গাছের নিচে জিরোচ্ছেন। রিক্সাটা অদৃশ্যও নয়, এমন কি অনেক দূর থেকেও দৃশ্যমান না, তাও নয়। সাঁই সাঁই করে চালানো এক সেডান কার এসে রিক্সার পাশে থামলো। শিক্ষিত দেখতে ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে রিক্সাওয়ালাকে সমানে চড় মারতে শুরু করলো। ৮-১০টা মেরেছিল বোধহয়, আমরা আরেক রিক্সা করে সেখানটা পার হচ্ছিলাম। যতটুকু বুঝলাম, উনি সাঁই সাঁই করে গাড়ি চালাতে পারেননি, রিক্সার জন্য তাকে কিছুটা ব্রেক চেপে মোড় নিতে হয়েছে। রিক্সাটা তার ৩৬০ ডিগ্রী রেডিয়াসে কমপক্ষে ৩০০ মিটার জুড়ে দৃশ্যমান। সুতরাং, ড্রাইভার দেখেননি এটা হওয়া সম্ভব না। মোড় নেয়ার সময় ওনাকে কেন কিঞ্চিত ব্রেক করতে হোলো এটাই তার আপত্তি।

আমার সাথে ছিলেন বাবা। তিনি রিক্সা থামাতে গেলেন এবং এর প্রতিবাদ করতে গেলেন। আমার বাবা ১৯৭১ এ অস্ত্র হাতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। আমি তার ছেলে হয়েও এতটা মনোবল তৈরী হয়নি। বললাম, থাক দরকার কি ঝামেলা করার? ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথম যে চিন্তাটা আমার মাথায় এসে যাওয়াতে প্রতিবাদের মনোবল হারিয়েছি তাহল, প্রতিবাদ করলে এই লোকতো আমাকেও চড় মারা শুরু করতে পারে। আমরা সমাজে মান সম্মান নিয়ে বাস করি – তখন আমার সম্মানের কি হবে? কিন্তু যখনই রিক্সা আবার চলতে শুরু করলো, তীব্র অনুশোচনা আমাকে গ্রাস করলো। Read the rest of this entry

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি -৩ (কারণ, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

আসুন একটা ইতিবাচক অনুশীলন দিয়ে শুরু করি। স্মরন করে দেখি শেষ কবে আমরা কারও কাছে এমন কোন আচরন পেয়েছি যা পেয়ে আমাদের মনে হয়েছিল “আহা! কত ভালো।” বা, “আহা! ওই ছেলেটা/মেয়েটা কত উদার/নিঃস্বার্থ।”

আপনি লিফটের দিকে দৌড় দিচ্ছেন দেখে কেউ এসে বাটন চেপে লিফটের দরজা বন্ধ হওয়া থামালো। বা, আপনাকে দাঁড়ানো দেখে বাসে কেউ উঠে আপনাকে বসার জন্য জায়গা করে দিলো। এসব বলছি না। বলছি এমন আচরন, ব্যবহার, সম্মান আর উপকারের কথা যা পেয়ে আপনার মনে হয়েছে যে আপনি তার যোগ্য নন।

আমি তখন ভ্যাংকুভার থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। আমার অ্যালেন নামের ক্যাথলিক একজনের সাথে পরিচয় ছিল যে আমার ডাউনটাউনের বাসা থেকে প্রায় ২০০ কিমি দূরে থাকতো। সে রাতে ফোন দিয়ে বলল, তোমারতো কাল সকালে ফ্লাইট, গোছগাছের জন্য সাহায্য করতে আমি সকাল সকাল তোমার ওখানে হাজির হব। তার আগে কোন কাজ শুরু কোরো না। আমি বললাম, কি দরকার কষ্ট করার, আমি বেঁধে ছেদে নিতে পারবো। ও তাও জোড়াজুড়ি করলো। আমি ভেবে দেখলাম, ও যখন আসবেই, তাহলে আমি ভোরে উঠেই গোছগাছ করে রাখি যেন ওকে কষ্ট না করতে হয়।

সে ২০০ কিমি ড্রাইভ করে এসে আমার সব কিছু প্রায় তৈরী দেখে মোটামুটি ক্ষুব্ধ। আমাকে কোলাকুলি করে বলছে, তুমি অতি চতুর এজন্য তোমাকে আমরা (মানে ও আর ওর বউ) এত ভালবাসি। তারপর সে আবারও ঘ্যান ঘ্যান শুরু করলো যে সে আমাকে লিফট দেবেই। আমিতো কোনভাবেই রাজি না, বললাম একটা ট্যাক্সি নিলেই হবে। তোমার কেন কষ্ট করতে হবে, তোমারতো এমনিতেই আরও ২০০ কিমি ড্রাইভ করে ফিরতে হবে। সে কোনভাবেই রাজি না। সে বলল, তোমার সামান্য কাজে আমি আসতে পারবো না? Read the rest of this entry

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি – ২ (কারণ, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

সফল প্রচারের একটা লক্ষন হল কোন একটা বিষয় নিয়ে যেখানে প্রচার হয়েছে তার গন্ডির বাইরেও আলোচনা চলা। আগের পর্বের সা’দ ভাইয়ের কথা বলেছিলাম। যদি ওনাকে তখন সন্তষ্ট করতে পারতাম, হয়ত তিনি তার বন্ধুদের মধ্যে বা কোন আড্ডায় কুরবানী নিয়ে ইসলামের প্রজ্ঞা সম্পর্কে আলোচনা করতে পারতেন। সবচেয়ে বড় কথা, উনি অজান্তেই ইসলামের একজন অ্যাডভোকেট হয়ে উঠতেন।

সেদিন গ্রামীনফোনের অফিসে গিয়েছিলাম, দেখি বড় একটা বেলুন উড়ছে, তাতে লেখা আছে “Treat your customers the way you want to be treated.” সত্যিই তাই, ধরুন আপনি একটা প্রযুক্তি সেমিনারে আলোচনা শুনছেন, এখন আপনার পাশ থেকে কেউ যদি দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলা শুরু করে, এবং আপনার মনযোগ দাবি করতে থাকে, অবশ্যই তিনি আপনার বিরক্তির কারন হবেন। তাই, গৎবাঁধা একই উপায়ে রাস্তাঘাটে, মাঠে-ময়দানে, ফেসবুকে, আগ্রহী-অনাগ্রী, অপরিচিত পরিচিতদের মধ্যে শ্রোতার মানসিকতাকে যাচাই না করে এক নাগাড়ে কুরআন-সুন্নতের বৃষ্টিপাত আর ‘আপনি শিরক, বিদ’আত ও কুফরে লিপ্ত আছেন’ বার বার মনে করিয়ে দিলে কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনবে এমন আশা করা বোকামি হবে। যেকোন প্রচারের উপযুক্ত প্রেক্ষাপট, শ্রোতা ও পরিবেশ লাগে। ইসলামের মত অসাধারন একটা জীবনব্যবস্থা এই তিনটি শর্ত পূরন না করে প্রচার করতে গেলে তা অবমূল্যায়িত হয় এবং বিতর্কের দরজা খুলে দেয় বলে আমি মনে করি। যদিও সবসময় শর্তগুলো নিশ্চিত করা যায় নাঃ তাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। Read the rest of this entry

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি – ১ (আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

একগাদা বন্ধু লাঞ্চ করতে বসেছি। বছরখানেক হল আমি বেশ কঠিন ডায়েটে চলছি। নিজের পাতের মাংস তাই সা’দ ভাইর পাতে তুলে দিয়েছি। তিনি বললেন, ও আচ্ছা, তুমিতো এখন ভেগান (vegetarian)। এই জন্যই কি দুধ চা দিতে মানা করলে?

আমি বললাম, আমি শুধু মাংস খাই না। দুধ, টুধ সব খাই।

সা’দ ভাই বলেন, তাহলে কুরবানীর সময় কি কর?

আমি বললাম, মাংস খুব কম খাই। কুরবানীতো মাংস খাওয়ার জন্য করি না। এটা ত্যাগের প্রমানস্বরুপ ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নত মেনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করি।

সা’দ ভাই বলেন, কুরবানী না দিয়ে টাকা দিয়েওতো ত্যাগ প্রমান করা যায়। পশু হত্যা করলাম না?

আমি বললাম, এখানে পশু হত্যা যদি নির্মমতা হয়, আপনি দেখবেন থ্যাঙ্কসগিভিংডে উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ টার্কি খাওয়া হয়, প্রতিনিয়ত মিলিয়ন মিলিয়ন চিকেন খাওয়া হয় – আমরাও খাই, কেএফসি, ন্যান্ডো’স এরাও আয়োজন করে আমাদের খাওয়ার জন্য। এই পৃথিবীর সবকিছুই পাঠানো হয়েছে আমাদের সেবার জন্য। আর যদি টাকা দিয়ে ত্যাগের কথা বলেন, সেক্ষেত্রে আমার জানা নাই। পড়াশোনা করে দেখতে হবে।

শফিক ভাই মোটামুটি মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলতে শুরু করলেন, না এর কারন আছে।

আমি ও সা’দ ভাই সাগ্রহে তার দিকে ফিরলাম ব্যাখ্যার জন্যে। সা’দ ভাই ইসলাম চর্চা না করলেও সব বিষয়ে জ্ঞানার্জনে তার ঝোঁক আছে। Read the rest of this entry