Category Archives: Beliefs

Islam 101: আল্লাহ কে?

বেশিরভাগ জন্মগত মুসলমান বাবা-মা নামাজ রোজা করেন সেই সুবাদে তারাও করেন। কিন্তু কাকে খুশি করার জন্য এগুলো করেন? তাঁর পরিচয় কি? তিনি কে? এসব নিয়ে কখনও পড়াশোনা করতে দেখা যায় না। মৃত্যুর আগ পর্যন্তও যে মুসলমান আল্লাহ্‌কে চেনে না তার চেয়ে দুর্ভাগা বোধহয় আর নেই। এখানে উল্লেখিত কিছু তথ্য বিচ্ছিন্নভাবে আপনার জানা থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহ্‌র পরিচয় হিসেবে হয়ত ভেবে দেখেননি। তো চলুন জেনে নেই আল্লাহ্‌ (সুবহানাল্লাহুওয়াতায়ালা) কে – কেন তার ইবাদত করা হয়।

আল্লাহ্‌ কোন ধর্মের ঈশ্বর?

আল্লাহ্‌ (সুবহানাল্লাহুওয়াতায়ালা) এই বিশ্বভ্রম্মান্ডের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, স্থপতি, নির্মাতা, পরিচালক, নিয়ন্ত্রক ও প্রভু।

আল্লাহ্‌ (ﷲ) আরবি শব্দ এবং ইসলামের ঈশ্বর বলে বহুল প্রচারিত হলেও পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ [মূল ধর্মগুলো] আসলে আল্লাহ্‌কেই বিশ্বভ্রম্মান্ডের একচ্ছত্র প্রভু এবং উপাসনার যোগ্য ঈশ্বর বলে মানে। কেবলমাত্র আমাদের পর্যাপ্ত পড়াশোনার অভাবে আমরা এই প্রকৃত সত্যটি জানি না।

হীব্রু বাইবেলে খ্রীষ্টানরা [যাদের কাছে ইসা (আঃ) নবী হিসেবে এসেছিলেন] বুক অফ জবে [নবী আইউব (আঃ)] ৪১ বার আল্লাহ্‌কে তাদের ঈশ্বর হিসেবে উল্লেখিত পেয়ে থাকবেন। খ্রীষ্টানরা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে আল্লাহ্‌কে  তাদের খোদা বলে মেনে থাকেন। হিন্দুধর্ম বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসের কারণে ব্যপক পরিচিত, কিন্তু হিন্দুধর্মগ্রন্থগুলো নিয়ে সত্যিকার অর্থে পড়াশোনা করলে দেখা যায় যে হিন্দু ধর্মও কেবলমাত্র একজন ঈশ্বরকেই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও প্রভু বলে স্বীকার করে নেয়। “তিনি এক ও অদ্বিতীয়,” “তাঁর কোন পিতামাতা ও কোন ঈশ্বর নেই,” “তাঁর মত কিছুই নেই,” “তিনি নিরাকার, তাঁকে কেউ চোখে দেখতে পায় না,” “তাঁর কোন প্রতিমা নেই,” “তিনি নিরাকার ও পবিত্র।“

ইহুদিরা [যাদের কাছে মূসা (আঃ) নবী হিসেবে এসেছিলেন] তাদের ঈশ্বরকে ইলোয়াহ (אלוהּ) নামে ডেকে থাকেন, যার ভাষাগত মূল হল আল-ইলাহ, অর্থঃ একমাত্র প্রভু। ভাষাগত দিক থেকে সেই আল (the) ইলাহ (God) থেকেই এসেছে আল্লাহ্‌। এমনকি শিখ ধর্মগ্রন্থেও [গুরু গ্রন্থ সাহিব] আল্লাহর [পাঞ্জাবিঃ ਅਲਹੁ] নাম ৪৬ বার ঈশ্বর হিসেবে উল্লেখ আছে।

যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যিনি আমাদের প্রতিপালক, তাঁকে তাবৎ দুনিয়ার সকল ধর্মের গ্রন্থে প্রভু বলে ঘোষনা করা হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আল্লাহ্‌ (সুবহানাল্লাহুওয়াতায়ালা), কেবল ইসলামের নয়, সকল ধর্মের এমনকি যারা ধর্মে বিশ্বাস করেন না সকলেরই স্রষ্টা ও ইবাদতের একমাত্র প্রভু।

Read the rest of this entry

ভাগ্যের পূর্বনির্ধারণ ও মুক্ত ইচ্ছা কি সাংঘর্ষিক? -২

[প্রথম পর্ব অবশ্য পাঠ্য যারা পড়েননি বা ভুলে গেছেন তাদের জন্য]

পূর্বের আলোচনায় আমরা কিছু প্রারম্ভিক আলোচনা সেরে নিয়েছিলাম। এবার তাই আমরা সরাসরি ভাগ্যের পূর্বনির্ধারণের বিষয়টির ইসলামিক বিশ্লেষণে চলে যেতে পারি।

ক্বদরের সংজ্ঞা  ও ইসলামে এর গুরুত্ব

ভাগ্যের পূর্বনির্ধারণ বলতে আমরা এতক্ষণ যা বলছিলাম তাকে ইসলামি পরিভাষায় ক্বদর (القدر) বলা হয়। ক্বদরের প্রসঙ্গ ক্বুরআন ও হাদীসে বহুবার এসেছে। আল্লাহ্‌ ক্বুরআনে বলেনঃ

নিশ্চয়ই প্রতিটি জিনিসকেই আমি সৃষ্টি করেছি ক্বদর দিয়ে[1]

আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ)-কে জিবরীল (আঃ) ছদ্মবেশে এসে জিজ্ঞেস করেছিলেন ঈমান কী? তিনি জবাবে বললেনঃ

(ঈমান হলো) যে তুমি বিশ্বাস করবে আল্লাহ্‌র ওপর, তার ফেরেশ্তাকূলের ওপর, তার কিতাবসমূহের ওপর, তার রাসূলদের ওপর, শেষ দিবসের ওপর ও (আরো) বিশ্বাস করবে ক্বদর ও তার ভালো-মন্দের ওপর[2]

ইমাম ইবন হাজার আল-‘আসক্বালানী[3] ক্বদরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেনঃ এর অর্থ হলো আল্লাহ্‌ তাআলা সব জিনিসেরই পরিণতি/ভাগ্য সম্বন্ধে জানেন তাদের আবির্ভাবের পূর্বেই। অতঃপর তিনি অস্তিত্ব দিলেন তার যা সেই পূর্ব জ্ঞান অনুসারে অস্তিত্বপ্রাপ্ত হওয়ার কথা। প্রতিটি সৃষ্ট বস্তুই আগত হচ্ছে তার (আল্লাহ্‌র) জ্ঞান, ক্ষমতা ও ইচ্ছে থেকে[4] Read the rest of this entry

ভাগ্যের পূর্বনির্ধারণ ও মুক্ত ইচ্ছা কি সাংঘর্ষিক? – ১

দ্বিতীয় পর্ব

ক’বছর আগে আমার এক আত্মীয়া আমাকে বেমক্কা বলে বসলেন যে, “এমন একটি প্রশ্ন আছে যার উত্তর পৃথিবীর কোন ‘ইমাম’-ই দিতে পারবে না”। কী সেই মহার্ঘ প্রশ্ন জানার আগ্রহ হল। তিনি বললেন, “আল্লাহ্‌ যদি সব আগে থেকেই ঠিক করে রাখেন তাহলে আমাদের ভালো-মন্দ সব কাজও তো তারই নির্ধারিত, তাহলে আর আমরা কেন দায়ী হচ্ছি”? আমি তাকে বলতে চাইলাম যে এ প্রশ্নটি ইসলামি ‘আক্বীদা শাস্ত্রে বহুল চর্চিত ও পঠিত একটি বিষয় এবং পৃথিবীর বেশিরভাগ ‘ইমাম’-এরই তা জানা থাকার কথা। তিনি আমার কথা একপ্রকার উড়িয়েই দিলেন। ‘পৃথিবীর সব ইমাম’-দের সম্পর্কে তার এত টনটনে জ্ঞান যে সেখান থেকে তাকে বিচ্যুত করা সময়ের বৃথা অপচয় মনে হলো।

আমার এই আত্মীয়ার মত আরো বহু লোককে দেখেছি এই প্রশ্নটি করে “হুজুরকে কাত করা গেছে” গোছের মুচকি হাসি দিতে। অনেকের কাছেই এই ব্যাপারটি একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন যা অন্ধ বিশ্বাসের কৌটোতে ভরে রাখা ছাড়া গত্যন্তর নেই। এই লেখাটিতে আমি আপনাদের সামনে ব্যাপারটির একটি ব্যাখ্যা  উপস্থাপন করতে ইচ্ছুক। দুই পর্বে আমি এই কাজটি করব। প্রথম পর্বে আমার চেষ্টা থাকবে এই বিষয়টি বোঝার আগে কিছু প্রিওরি (priori) দাঁড় করাতে। এতে করে একজন পাঠক আল্লাহ্‌ চান তো সমস্যাটির স্বরূপ বুঝতে সমর্থ হবেন। দ্বিতীয় পর্বে আমি বিষয়টির ইসলামি শাস্ত্রগত ব্যাখ্যা তুলে ধরব যা এই আলোচনার পোস্টেরিওরি (posteriori) হিসেবে কাজ করবে। দুটি পর্ব একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। তাই পাঠকের কাছে অনুরোধ রইল দুটি লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ে তবেই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে। Read the rest of this entry

এমনি এমনিই কি কিছু হয়?

“মানবজীবনের উদ্দেশ্য” সিরিজঃ প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব

ফেব্রুয়ারি মাসের সন্ধ্যা। একটু আগেই সূর্য ডুবেছে। পশ্চিম আকাশে দেখা যাচ্ছে গোধুলির আভা। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে, মৌসুমের প্রথম দখিনা বাতাস। সুজন ও সুজানা দম্পতির ছাদে চলছে পার্টি। ওরা ওদের নতুন বাড়িতে উঠেছে, তাই এই বিশেষ পার্টির আয়োজন।

মাস দুয়েক হলো সুজন আর সুজানা তাদের নিজেদের ফ্ল্যাটে উঠেছে। আগে ওরা থাকত ভাড়া বাড়িতে। নিজের বাড়িতে থাকার স্বাধীনতাটাই অন্যরকম। কারণ, বাড়িওয়ালার কোন “অন্যায় আবদার” শুনতে হয় না, সারা দেয়াল পেরেক ফুটিয়ে ভরে ফেললেও কেউ কিছু বলে না।!

সুজন পেশায় একজন আর্কিটেক্ট, আর সুজানা একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। স্বভাবতই তারা অন্যদের চাইতে একটু বেশিই সৌখিন। তাদের ফ্ল্যাটটি দক্ষিণ-পূর্বমুখী, ফলে চাইলেই গরমকালে বারান্দায় বা শোবার ঘরে বসে উপভোগ করা যাবে অফুরন্ত দখিনা বাতাস। আবার সকালে একটু বেলা বাড়ার পর থেকেই থাকবে না কড়া রোদের ঝামেলা। ছয় তলা বিল্ডিং-এর টপ ফ্লোরে পড়েছে ফ্ল্যাটটি। কেনার সময়ই তারা ঠিক করেছিল যে, ছাদে তাদের ফ্ল্যাটের ঠিক উপরের অংশটি হবে এক্সক্লুসিভ। একান্তই নিজেদের। এজন্য জমির মালিক এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। গুনতে হয়েছে অনেকগুলো বাড়তি টাকা।

ফ্ল্যাটটি মনের মতো করে গোছাতে ওরা সপ্তাহখানেক লাগিয়ে ফেলল। এরপর ওদের মনোযোগ গেল ছাদের দিকে। এক্সক্লুসিভ ছাদ বলে কথা! কী করা যায় এখানে? Read the rest of this entry

এভাবে কখনো ভেবেছেন কি?

“আমি নামায পড়ি না বা রোযা রাখি না ঠিকই, কিন্তু আমার মন পরিষ্কার। আমি জেনে-শুনে কারও ক্ষতি করি না, সবসময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করি। ভালো কাজ করা এবং সৎভাবে জীবনযাপন করাটাই হল জীবনের আসল উদ্যেশ্য। তাছাড়া তুমি যদি দেখ, যারা নিয়মিত নামায পড়ে তারা সবাই কি সৎ হতে পেরেছে? তারা কি ঘুষ খায় না? তারা কি অন্যায় করে না? আসলে ধর্ম-কর্ম করাটা আসল কথা না। তুমি যদি তোমার মনকে পরিষ্কার করতে পার, তবে সেটাই হল আসল সফলতা।” বলছিলেন আমার খুব কাছের এবং প্রিয় একজন মানুষ।

এর আগেও আমি অনেকবার অনেকের কাছে এরকম কথা শুনেছি। আপনিও হয়ত শুনেছেন। কথাগুলো আমাকে নাড়া দেয়, আপনাকে দেয় কি? আপনি আস্তিক বা নাস্তিক, ধার্মিক বা অধার্মিক, যাই হন না কেন, কখনো গভীরভাবে ভেবে দেখেছেন কি, যে জীবনের আসল উদ্যেশ্য কী? অথবা আমাদের এই জীবনের উদ্যেশ্য বলে আদৌ কি কিছু আছে?

০০০০০

মানুষ কৌতুহলী প্রাণী। শৈশবকাল থেকেই সে খুজে ফেরে অনেক প্রশ্নের উত্তর। কোন প্রশ্নের উত্তর সে পায়, কোনটির পায় না। সে জানতে চায় তার পৃথিবীতে আসার রহস্য। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ খুজে ফিরছে তার নিজের সৃষ্টিরহস্য। যুগে যুগে দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেছেন মানুষের সৃষ্টিরহস্য উন্মোচন করতে।

আমি কোন দার্শনিক বা বিজ্ঞানী নই। তাই তাদের মতো সূক্ষভাবে চিন্তা করতে আমি অপারগ। তবে আমারও আছে একটি অনুসন্ধিৎসু মন। আমিও জানতে চাই আমার সৃষ্টির রহস্য।   Read the rest of this entry