ব্লগ আর্কাইভস

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি – ৪ (তাহাদের কথা)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

আগের পর্ব লিখেছিলাম আমাদের অতিরিক্ত ইতিবাচক দিক নিয়ে। আজ লিখবো অত্যন্ত নেতিবাচক দিক নিয়ে। এই সমাজকে আমরা আমাদের কলুষতা থেকে ক্ষান্ত দেইনি। আমরা আমাদের নোংরামি নিয়েও কথা বলতে চাই। অন্ধ হলে কি আর প্রলয় বন্ধ থাকে? লেখাটি নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ – দুর্বল মনের মানুষের জন্য অনুপযুক্ত।

অন্যায় যে করে

গত শনিবারের দুপুরের কথা। সরাকারী ছুটির দিন ধানমন্ডি এলাকায় এইচএসবিসি অফিসের পাশে এক রিক্সাওয়ালা গাছের নিচে জিরোচ্ছেন। রিক্সাটা অদৃশ্যও নয়, এমন কি অনেক দূর থেকেও দৃশ্যমান না, তাও নয়। সাঁই সাঁই করে চালানো এক সেডান কার এসে রিক্সার পাশে থামলো। শিক্ষিত দেখতে ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে রিক্সাওয়ালাকে সমানে চড় মারতে শুরু করলো। ৮-১০টা মেরেছিল বোধহয়, আমরা আরেক রিক্সা করে সেখানটা পার হচ্ছিলাম। যতটুকু বুঝলাম, উনি সাঁই সাঁই করে গাড়ি চালাতে পারেননি, রিক্সার জন্য তাকে কিছুটা ব্রেক চেপে মোড় নিতে হয়েছে। রিক্সাটা তার ৩৬০ ডিগ্রী রেডিয়াসে কমপক্ষে ৩০০ মিটার জুড়ে দৃশ্যমান। সুতরাং, ড্রাইভার দেখেননি এটা হওয়া সম্ভব না। মোড় নেয়ার সময় ওনাকে কেন কিঞ্চিত ব্রেক করতে হোলো এটাই তার আপত্তি।

আমার সাথে ছিলেন বাবা। তিনি রিক্সা থামাতে গেলেন এবং এর প্রতিবাদ করতে গেলেন। আমার বাবা ১৯৭১ এ অস্ত্র হাতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। আমি তার ছেলে হয়েও এতটা মনোবল তৈরী হয়নি। বললাম, থাক দরকার কি ঝামেলা করার? ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথম যে চিন্তাটা আমার মাথায় এসে যাওয়াতে প্রতিবাদের মনোবল হারিয়েছি তাহল, প্রতিবাদ করলে এই লোকতো আমাকেও চড় মারা শুরু করতে পারে। আমরা সমাজে মান সম্মান নিয়ে বাস করি – তখন আমার সম্মানের কি হবে? কিন্তু যখনই রিক্সা আবার চলতে শুরু করলো, তীব্র অনুশোচনা আমাকে গ্রাস করলো। Read the rest of this entry

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি -৩ (কারণ, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

আসুন একটা ইতিবাচক অনুশীলন দিয়ে শুরু করি। স্মরন করে দেখি শেষ কবে আমরা কারও কাছে এমন কোন আচরন পেয়েছি যা পেয়ে আমাদের মনে হয়েছিল “আহা! কত ভালো।” বা, “আহা! ওই ছেলেটা/মেয়েটা কত উদার/নিঃস্বার্থ।”

আপনি লিফটের দিকে দৌড় দিচ্ছেন দেখে কেউ এসে বাটন চেপে লিফটের দরজা বন্ধ হওয়া থামালো। বা, আপনাকে দাঁড়ানো দেখে বাসে কেউ উঠে আপনাকে বসার জন্য জায়গা করে দিলো। এসব বলছি না। বলছি এমন আচরন, ব্যবহার, সম্মান আর উপকারের কথা যা পেয়ে আপনার মনে হয়েছে যে আপনি তার যোগ্য নন।

আমি তখন ভ্যাংকুভার থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। আমার অ্যালেন নামের ক্যাথলিক একজনের সাথে পরিচয় ছিল যে আমার ডাউনটাউনের বাসা থেকে প্রায় ২০০ কিমি দূরে থাকতো। সে রাতে ফোন দিয়ে বলল, তোমারতো কাল সকালে ফ্লাইট, গোছগাছের জন্য সাহায্য করতে আমি সকাল সকাল তোমার ওখানে হাজির হব। তার আগে কোন কাজ শুরু কোরো না। আমি বললাম, কি দরকার কষ্ট করার, আমি বেঁধে ছেদে নিতে পারবো। ও তাও জোড়াজুড়ি করলো। আমি ভেবে দেখলাম, ও যখন আসবেই, তাহলে আমি ভোরে উঠেই গোছগাছ করে রাখি যেন ওকে কষ্ট না করতে হয়।

সে ২০০ কিমি ড্রাইভ করে এসে আমার সব কিছু প্রায় তৈরী দেখে মোটামুটি ক্ষুব্ধ। আমাকে কোলাকুলি করে বলছে, তুমি অতি চতুর এজন্য তোমাকে আমরা (মানে ও আর ওর বউ) এত ভালবাসি। তারপর সে আবারও ঘ্যান ঘ্যান শুরু করলো যে সে আমাকে লিফট দেবেই। আমিতো কোনভাবেই রাজি না, বললাম একটা ট্যাক্সি নিলেই হবে। তোমার কেন কষ্ট করতে হবে, তোমারতো এমনিতেই আরও ২০০ কিমি ড্রাইভ করে ফিরতে হবে। সে কোনভাবেই রাজি না। সে বলল, তোমার সামান্য কাজে আমি আসতে পারবো না? Read the rest of this entry

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি – ২ (কারণ, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

সফল প্রচারের একটা লক্ষন হল কোন একটা বিষয় নিয়ে যেখানে প্রচার হয়েছে তার গন্ডির বাইরেও আলোচনা চলা। আগের পর্বের সা’দ ভাইয়ের কথা বলেছিলাম। যদি ওনাকে তখন সন্তষ্ট করতে পারতাম, হয়ত তিনি তার বন্ধুদের মধ্যে বা কোন আড্ডায় কুরবানী নিয়ে ইসলামের প্রজ্ঞা সম্পর্কে আলোচনা করতে পারতেন। সবচেয়ে বড় কথা, উনি অজান্তেই ইসলামের একজন অ্যাডভোকেট হয়ে উঠতেন।

সেদিন গ্রামীনফোনের অফিসে গিয়েছিলাম, দেখি বড় একটা বেলুন উড়ছে, তাতে লেখা আছে “Treat your customers the way you want to be treated.” সত্যিই তাই, ধরুন আপনি একটা প্রযুক্তি সেমিনারে আলোচনা শুনছেন, এখন আপনার পাশ থেকে কেউ যদি দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলা শুরু করে, এবং আপনার মনযোগ দাবি করতে থাকে, অবশ্যই তিনি আপনার বিরক্তির কারন হবেন। তাই, গৎবাঁধা একই উপায়ে রাস্তাঘাটে, মাঠে-ময়দানে, ফেসবুকে, আগ্রহী-অনাগ্রী, অপরিচিত পরিচিতদের মধ্যে শ্রোতার মানসিকতাকে যাচাই না করে এক নাগাড়ে কুরআন-সুন্নতের বৃষ্টিপাত আর ‘আপনি শিরক, বিদ’আত ও কুফরে লিপ্ত আছেন’ বার বার মনে করিয়ে দিলে কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনবে এমন আশা করা বোকামি হবে। যেকোন প্রচারের উপযুক্ত প্রেক্ষাপট, শ্রোতা ও পরিবেশ লাগে। ইসলামের মত অসাধারন একটা জীবনব্যবস্থা এই তিনটি শর্ত পূরন না করে প্রচার করতে গেলে তা অবমূল্যায়িত হয় এবং বিতর্কের দরজা খুলে দেয় বলে আমি মনে করি। যদিও সবসময় শর্তগুলো নিশ্চিত করা যায় নাঃ তাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। Read the rest of this entry

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি – ১ (আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

একগাদা বন্ধু লাঞ্চ করতে বসেছি। বছরখানেক হল আমি বেশ কঠিন ডায়েটে চলছি। নিজের পাতের মাংস তাই সা’দ ভাইর পাতে তুলে দিয়েছি। তিনি বললেন, ও আচ্ছা, তুমিতো এখন ভেগান (vegetarian)। এই জন্যই কি দুধ চা দিতে মানা করলে?

আমি বললাম, আমি শুধু মাংস খাই না। দুধ, টুধ সব খাই।

সা’দ ভাই বলেন, তাহলে কুরবানীর সময় কি কর?

আমি বললাম, মাংস খুব কম খাই। কুরবানীতো মাংস খাওয়ার জন্য করি না। এটা ত্যাগের প্রমানস্বরুপ ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নত মেনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করি।

সা’দ ভাই বলেন, কুরবানী না দিয়ে টাকা দিয়েওতো ত্যাগ প্রমান করা যায়। পশু হত্যা করলাম না?

আমি বললাম, এখানে পশু হত্যা যদি নির্মমতা হয়, আপনি দেখবেন থ্যাঙ্কসগিভিংডে উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ টার্কি খাওয়া হয়, প্রতিনিয়ত মিলিয়ন মিলিয়ন চিকেন খাওয়া হয় – আমরাও খাই, কেএফসি, ন্যান্ডো’স এরাও আয়োজন করে আমাদের খাওয়ার জন্য। এই পৃথিবীর সবকিছুই পাঠানো হয়েছে আমাদের সেবার জন্য। আর যদি টাকা দিয়ে ত্যাগের কথা বলেন, সেক্ষেত্রে আমার জানা নাই। পড়াশোনা করে দেখতে হবে।

শফিক ভাই মোটামুটি মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলতে শুরু করলেন, না এর কারন আছে।

আমি ও সা’দ ভাই সাগ্রহে তার দিকে ফিরলাম ব্যাখ্যার জন্যে। সা’দ ভাই ইসলাম চর্চা না করলেও সব বিষয়ে জ্ঞানার্জনে তার ঝোঁক আছে। Read the rest of this entry