চালু রাখুন আপনার সার্চ ইঞ্জিন শেষ দশ রাতের জন্যও

আমরা সবাই কখনো না কখনো গুগল বা অন্যান্য  সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্য নিয়েছি বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজের সাপোর্টের জন্য। মজার ব্যপার হচ্ছে এই সব সার্চ ইঞ্জিনে খোঁজ করতে গিয়ে আমরা কিন্তু কখনো হতাশ হইনি। আমরা সেখান থেকে কিছু না কিছু প্রাসঙ্গিক জিনিস পেয়েই যাই, যা আমাদের যে কোনো প্রজেক্টের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অসাধারণ অবদান রাখে।

আপনি হয়ত মনে করতে পারেন এতে আপনার কোনো ভূমিকা নেই। আমি বলব কথাটি ভুল। কারণ প্রথমত আপনার উদ্যোগ, তারপর আপনার সময় যা আপনাকে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করে আনতে সহায়তা করেছে এত মিলিয়ন/বিলিয়ন উপাত্ত থেকে। আর অবশেষে আপনি যা পেয়েছেন তা তো আর রেডিমেড কেক ছিল না, আপনাকে তা করে নিতে হয়েছে নিজের মত করে। আমি জানিনা আপনি এভাবে কখনো ভেবে দেখেছেন কিনা। আমাদের জীবনেও কিন্তু এইরকম একটা মাস আসে, যে মাসে আমাদেরকে খোঁজ করে বের করতে হয় এমন একটা সময় যা অনেক অনেক গুন বেশী মূল্যবান। রাত জেগে, কষ্ট করে না ঘুমিয়ে, আর ইবাদতের মাধ্যমে। সেটা হল রমযান মাসের এক বিশেষ রাত “লাইলাতুল-কদর”।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সালাত আদায় ও ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে” [সহীহ বুখারি ও মুসলিম]

গুগল সার্চ ইঞ্জিন ছাড়া যেমন আপনার প্রজেক্টের অগ্রগতি হতে পারতনা; তেমনি কিন্তু আপনাকে খুঁজতে হবে এই রাতটিকে যেন আপনার জীবনের বাকী সময় গুলো সুন্দর করে কাটাতে পারেন এবং মৃত্যুর পরে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন। আপনার হয়ত মনে হতে পারে কেন এত কষ্ট করে এক রাতের জন্য আপনাকে বসে বসে অপেক্ষা করতে হবে? আর কেনইবা আপনাকে খুঁজতে হবে এই রাত? তার উত্তর আপনি পাবেন স্বয়ং পবিত্র কুরআনে। এই রাতটি এতই পবিত্র যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই রাতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ একটি সূরা নাযিল করেছেন –

আমি একে (কুরআনকে) নাযিল করেছি লাইলাতুল-কদরে – إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
লাইলাতুল-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন? – وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ
লাইলাতুল-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ – لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে – تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে – سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ

যদিও আমার এই লেখার টাইটেলে আমি বলেছি ‘চালু রাখুন আপনার সার্চ ইঞ্জিন দশ রাতের জন্যও’ কিন্তু একটু উপলব্ধি করলেই আপনি দেখতে পারবেন আপনি কিন্তু আসলে আপানার এই সার্চ ইঞ্জিন সব সময় চালু রাখেন। কিভাবে? একটা সমসাময়িক উদাহারন দেয়া যাক –

“ধরুন আপনি ঈদে আপনার জন্য একটি পাঞ্জাবী কিনবেন। আপনি কি করবেন? বিভিন্ন ব্র্যান্ড-এর শোরুমে ঘুরে বেড়াবেন এমনকি অনেক সময় একই ব্র্যান্ড-এর বিভিন্ন আউটলেটে যাবেন কারন আপনার ধারনা বেষ্ট পাঞ্জাবীটা হয়ত ওখানেই পাওয়া যাবে। তারপর দেখবেন কালার, সাইজ, কাপড়ের কাজের ধরন, কাপড়ের কোয়ালিটি ইত্যাদি। আর এত কিছুর পর যখন আপনি খুঁজে পাবেন আপনার পছন্দসই পাঞ্জাবী আপনি তখন কেমন স্বস্তি পাবেন একটু ভাবুন। তারপরও কিন্তু সেলসম্যানদের আপনি বলে আসবেন পছন্দ না হলে কিন্তু চেঞ্জ করে নিয়ে যাবো”

এভাবেই আপনি রোজার মাসের আসল তৃপ্তিটা পাবেন যখন আপনি খুঁজে বেড়াবেন এই বরকতময় রাতটিকে। আপনি হয়ত জানবেনও না দশদিন কষ্টের ফলে আপনি এই বিশেষ বরকতময় রাতটি পেয়ে গেছেন আর আপনার দুআ কবুল হয়ে গেছে আল্লাহর দরবারে, আলহামদুলিল্লাহ। একটু ভেবে দেখুন আল্লাহর কাছে আপনি প্রিয় বান্দা হয়ে উঠবেন। ঠিক সেই পাঞ্জাবীর মত প্রিয় যেটা আপনি ঈদের জন্য নিয়েছেন অনেক খোঁজাখুঁজির পরে।

সহীহ বুখারি ও মুসলিম এসেছে আমাদের প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজানের এই শেষ দশকে ইতিকাফের (মসজিদে অবস্থান করে ইবাদতে একাগ্রচিত্ত হওয়া) জন্য মসজিদে চলে যেতেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি এ আমল অব্যাহত রেখেছেন। দুনিয়ার সমস্ত কিছু ছেড়ে আল্লাহর ঘরে শুধুমাত্র তাঁর সান্নিধ্যে থাকার জন্য। যাতে করে এই দশদিনে কদরের রাতটি খুঁজে পেতে সহজ হয়ে যায়। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রী-গণ ইতিকাফ করেছেন।

তবে আপনি বাসায়ও এই শেষ দশরাতে ইবাদত করতে পারেন, আপনাকে মসজিদে অবস্থান করতেই হবে এমন নয়। এখানে আমি কিছু কমন আমলের কথা উল্লেখ করলাম আপনাকে একটু মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য, ইনশাআল্লাহ আপনার উপকারে আসবে।

–     প্রথমত আপনার সমস্ত কেনাকাটা এই দশদিনের আগেই সেরে ফেলুন এবং খাবার-দাবারের বিশেষ আয়োজন গুলো আগেই স্টক করে রাখুন যাতে পুরো সময় ও শক্তি আপনি এই দশ দিনের জন্য জমা রাখতে পারেন।
–     এশার নামায এবং তারাবী মসজিদে আদায় করুন (বিশেষভাবে পুরুষদের ক্ষেত্রে) এরপর বাসায় এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে সেহেরীর কিছু পূর্বে উঠে পড়ুন আর নামাজে দাড়িয়ে পড়ুন।
–     দুই দুই রাকাত করে নামাজ পড়তে থাকুন আর যথাসম্ভব লম্বা করুন। আপনি যেসব সূরা পারেন সেইগুলোই দিয়ে নামায পড়ুন।
–     নামায পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসে বসে দুআ/কুরআন/যিকর যেটা আপনার ভাল লাগে সেটাতেই মনোনিবেশ করুন।
–     এরপর আবার কিছুক্ষন নামায পড়ুন এবং সবশেষে বিতর-এর নামায পড়ে নিন।
–     আর ফজরের নামাজ মসজিদে অবশ্যই পড়তে গাফিলতি করবেন না, কারন হাদীসে আছে “যে ব্যক্তি ইশা এবং ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করল সে যেন সারা রাত ইবাদত করল।”

তাহলে আসুন আমরা আর সময় নষ্ট না করে আমাদের সার্চ ইঞ্জিনটি চালু করে দেই এই দশ রাতের জন্য যাতে আমরা কদরের সেই মহিমাময় রাতটি খুঁজে পেয়ে যাই।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সাহায্য করুন। আমিন।

About Abdur Rahman

দুনিয়াবী কাজের পাশাপাশি একটু-আধটু ইসলামের জন্য কাজ করতে চেষ্টা করছি; অনলাইনে লেখালেখির মাধ্যমে। আর আমি মনে করি এইটুকু করতে পারাও আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার কাছ থেকে আসা অনেক বড় একটা নেয়ামত। দোয়া করবেন; আমার ও আমার পরিবারের জন্য। এবং দোয়া করবেন ইসলামের প্রচারকদের জন্য, যাতে তাঁরা সমাজের মাঝে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে পারেন উত্তম ও সহজ উপায়ে। আল্লাহ তুমি আমাদের সঠিক পথ দেখাও।

Posted on অগাষ্ট 12, 2012, in Advice & Tips, Ramadan & Fasting and tagged , . Bookmark the permalink. ১ টি মন্তব্য.

  1. অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায়, সুন্দর উদাহরণ দিয়ে লেখক লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব এবং এই রাতে কী করতে হবে তা বুঝিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরে যথাযথভাবে ইবাদাত করার এবং এই রাতের মর্যাদা লাভ করার তৌফিক দিন।

মন্তব্য লিখুন