Author Archives: তানজিম সাকীব

এক নজরে যাকাত আল-ফিতর

যাকাত আল-ফিতর হল এক রকম দান। ফিতর শব্দটির অর্থ আর ইফতারের অর্থ একই, এবং এটা একই মূল, ফুতর থেকে এসেছে যার মানে হল ‘রোজা ভাঙ্গা।’ যাকাত আল-ফিতর মুসলমান সমাজের মধ্যে ভালোবাসার একটা শক্তিশালী বন্ধন তৈরী করতে সাহায্য করে। ধনীরা বছরে একটি দিন হলেও সরাসরি গরীবদের দান করে থাকে এবং সামর্থ্যবানেদের মধ্যে আরও উদার হওয়ার শিক্ষা দিয়ে থাকে।

(ফটো কপিরাইট)

যাকাত আল-ফিতরে রোজাদারের উপকার

ইবনে আব্বাস বলেন, রাসূল (সাঃ) যাকাত আল-ফিতর আবশ্যিক (ওয়াজিব) করেছেন যেন এটা রোজাদারের বেহুদা কথা, নোংরা ভাষা থেকে পবিত্র করে, এবং গরিবদের খাওয়ানো যায়। যে (ঈদের) নামাজের আগে এটা দান করে দেয়, এটা গ্রহন হয়ে যায়, আর যে নামাজের পর দান করে, এটা কেবল একটি সাদাকাহ (দান)। [আবু দাউদঃ ১৩৭১] Read the rest of this entry

Islam 101: আল্লাহ কে?

বেশিরভাগ জন্মগত মুসলমান বাবা-মা নামাজ রোজা করেন সেই সুবাদে তারাও করেন। কিন্তু কাকে খুশি করার জন্য এগুলো করেন? তাঁর পরিচয় কি? তিনি কে? এসব নিয়ে কখনও পড়াশোনা করতে দেখা যায় না। মৃত্যুর আগ পর্যন্তও যে মুসলমান আল্লাহ্‌কে চেনে না তার চেয়ে দুর্ভাগা বোধহয় আর নেই। এখানে উল্লেখিত কিছু তথ্য বিচ্ছিন্নভাবে আপনার জানা থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহ্‌র পরিচয় হিসেবে হয়ত ভেবে দেখেননি। তো চলুন জেনে নেই আল্লাহ্‌ (সুবহানাল্লাহুওয়াতায়ালা) কে – কেন তার ইবাদত করা হয়।

আল্লাহ্‌ কোন ধর্মের ঈশ্বর?

আল্লাহ্‌ (সুবহানাল্লাহুওয়াতায়ালা) এই বিশ্বভ্রম্মান্ডের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, স্থপতি, নির্মাতা, পরিচালক, নিয়ন্ত্রক ও প্রভু।

আল্লাহ্‌ (ﷲ) আরবি শব্দ এবং ইসলামের ঈশ্বর বলে বহুল প্রচারিত হলেও পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ [মূল ধর্মগুলো] আসলে আল্লাহ্‌কেই বিশ্বভ্রম্মান্ডের একচ্ছত্র প্রভু এবং উপাসনার যোগ্য ঈশ্বর বলে মানে। কেবলমাত্র আমাদের পর্যাপ্ত পড়াশোনার অভাবে আমরা এই প্রকৃত সত্যটি জানি না।

হীব্রু বাইবেলে খ্রীষ্টানরা [যাদের কাছে ইসা (আঃ) নবী হিসেবে এসেছিলেন] বুক অফ জবে [নবী আইউব (আঃ)] ৪১ বার আল্লাহ্‌কে তাদের ঈশ্বর হিসেবে উল্লেখিত পেয়ে থাকবেন। খ্রীষ্টানরা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে আল্লাহ্‌কে  তাদের খোদা বলে মেনে থাকেন। হিন্দুধর্ম বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসের কারণে ব্যপক পরিচিত, কিন্তু হিন্দুধর্মগ্রন্থগুলো নিয়ে সত্যিকার অর্থে পড়াশোনা করলে দেখা যায় যে হিন্দু ধর্মও কেবলমাত্র একজন ঈশ্বরকেই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও প্রভু বলে স্বীকার করে নেয়। “তিনি এক ও অদ্বিতীয়,” “তাঁর কোন পিতামাতা ও কোন ঈশ্বর নেই,” “তাঁর মত কিছুই নেই,” “তিনি নিরাকার, তাঁকে কেউ চোখে দেখতে পায় না,” “তাঁর কোন প্রতিমা নেই,” “তিনি নিরাকার ও পবিত্র।“

ইহুদিরা [যাদের কাছে মূসা (আঃ) নবী হিসেবে এসেছিলেন] তাদের ঈশ্বরকে ইলোয়াহ (אלוהּ) নামে ডেকে থাকেন, যার ভাষাগত মূল হল আল-ইলাহ, অর্থঃ একমাত্র প্রভু। ভাষাগত দিক থেকে সেই আল (the) ইলাহ (God) থেকেই এসেছে আল্লাহ্‌। এমনকি শিখ ধর্মগ্রন্থেও [গুরু গ্রন্থ সাহিব] আল্লাহর [পাঞ্জাবিঃ ਅਲਹੁ] নাম ৪৬ বার ঈশ্বর হিসেবে উল্লেখ আছে।

যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যিনি আমাদের প্রতিপালক, তাঁকে তাবৎ দুনিয়ার সকল ধর্মের গ্রন্থে প্রভু বলে ঘোষনা করা হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আল্লাহ্‌ (সুবহানাল্লাহুওয়াতায়ালা), কেবল ইসলামের নয়, সকল ধর্মের এমনকি যারা ধর্মে বিশ্বাস করেন না সকলেরই স্রষ্টা ও ইবাদতের একমাত্র প্রভু।

Read the rest of this entry

বকধার্মিক

আকাশে শান্তির নীড়ের প্রতীক বকের মত এহেন নিরীহ এক পাখির নামে কি বিশাল এক কলংক ‘বকধার্মিক।’ আচ্ছা, বক কি কারও বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে? উঠানে/বারান্দায় নেড়ে দেয়া কাপড় চুরি করে পালিয়ে গেছে? রাতের অন্ধকারে কারও হাঁস মুরগি খেয়ে গেছে? নাকি কারও ক্ষেতের কুমড়া খেয়ে সাবাড় করেছে? তাহলে, মুনাফেক্বী/হিপোক্রেসির সাথে বকের সম্পর্ক কি? বেচারা বক!

June_05_169_Medium

নাহয় বুঝলাম, বাংলা সাহিত্যিকেরা বককে ফাঁসিয়ে দিয়ে ভুল করেছেন, কিন্তু আমরা তাকে নির্যাতন করছি কেন? (স্যরি, নির্যাতন আজকাল বেশ বিখ্যাত একটা বাজ্জওয়ার্ড – না ব্যবহার করতে চাইলেও চলে আসে) ভন্ড, প্রতারক, নিমকহারাম, হিপোক্রেট, মুনাফিক্ব এসব না বলে বকধার্মিক কেন বলছি? সবকিছুকে হাল্কা করে দেখার ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত পারদর্শী। ভন্ডামির মত ভয়ংকর রোগকেও তাই আমাদের বকের মত নিরীহ প্রাণীর ওপর দিয়ে চালাতে হবে যেন জিনিসটা হাল্কা হয়ে উপেক্ষা করা সহজতর হয়।

সোশ্যাল মিডিয়াতে একে অপরকে নাস্তিক, আস্তিক, বকধার্মিক!, ইহুদী, খৃষ্টান বানিয়ে ছাড়ছি, সকাল থেকে দুপুর থেকে গভীর রাত। এদিকে ঘড়ি ছুটে চলে একের পর এক দিন শেষ করে দেয়, মুয়াজ্জিন আজানের পর আজান দিয়ে যায়, ওয়াক্তের পর ওয়াক্ত চলে যায়। ফেসবুককে কাছে পেয়ে নামাজ থেকে দূরে আছি। আর ইন্টারনেটে দেশে বিদেশে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করে গভীর রাতে ঘুমাতে হয়, ফজরের নামাজ পড়া কি সম্ভব বলেন? আসলেই কি ধর্ম প্রতিষ্ঠা/ধর্মের দিকে দাওয়াত দিচ্ছি? নাকি আমাদের ইগো প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে যাচ্ছি? এটা কি আদৌ ইন্টারনেট ভিত্তিক ধর্মকে জয়ী করার যুদ্ধ না নিজের ইগোকে? ইসলাম জয়ী হবেই আপনি ফেসবুকে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি করলেও না করলেও – সেই প্রতিজ্ঞা আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা নিজেই করেছেন। আমরা দৃষ্টান্তমূলক মুসলিম হতে না পারলে নিদেনপক্ষে ফেসবুকে ঝড় তুলে ইসলামকে জয়ী করানো যাবেনা।

আজান দেয়, মাথায় কাপড় দিব – কারন না দিলে লোকে বলবে ভালো ফ্যামিলি থেকে আসিনি, কিন্তু নামাজ পড়বো না। এখনকার মেয়েরা যদিও মাথায়ও কাপড় দেয় না শোনা যায়। আর যদি দেয়ও আজান দিলেই কেবল বাবার অনুরোধ মনে পড়ে কেন? “মাথায় কাপড় দে, মা।”  নিজের মেয়ের নগ্ন শরীর মানুষের চোখকে খাওয়াতে না পারলেতো লোকে আমাদের আধুনিক পরিবার বলবেনা। হিজাব পরালেও খুউউব টাইটফিট হিজাব পরাবো যতটা টাইট হয়ত নন-হিজাবিরাও এতটা পরে না। আমাদের যদি কোন ধারনা থাকতো, টাইটফিট হিজাবও ছেলেদের জন্য কত বড় জুলুম। Read the rest of this entry

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি – ৪ (তাহাদের কথা)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

আগের পর্ব লিখেছিলাম আমাদের অতিরিক্ত ইতিবাচক দিক নিয়ে। আজ লিখবো অত্যন্ত নেতিবাচক দিক নিয়ে। এই সমাজকে আমরা আমাদের কলুষতা থেকে ক্ষান্ত দেইনি। আমরা আমাদের নোংরামি নিয়েও কথা বলতে চাই। অন্ধ হলে কি আর প্রলয় বন্ধ থাকে? লেখাটি নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ – দুর্বল মনের মানুষের জন্য অনুপযুক্ত।

অন্যায় যে করে

গত শনিবারের দুপুরের কথা। সরাকারী ছুটির দিন ধানমন্ডি এলাকায় এইচএসবিসি অফিসের পাশে এক রিক্সাওয়ালা গাছের নিচে জিরোচ্ছেন। রিক্সাটা অদৃশ্যও নয়, এমন কি অনেক দূর থেকেও দৃশ্যমান না, তাও নয়। সাঁই সাঁই করে চালানো এক সেডান কার এসে রিক্সার পাশে থামলো। শিক্ষিত দেখতে ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে রিক্সাওয়ালাকে সমানে চড় মারতে শুরু করলো। ৮-১০টা মেরেছিল বোধহয়, আমরা আরেক রিক্সা করে সেখানটা পার হচ্ছিলাম। যতটুকু বুঝলাম, উনি সাঁই সাঁই করে গাড়ি চালাতে পারেননি, রিক্সার জন্য তাকে কিছুটা ব্রেক চেপে মোড় নিতে হয়েছে। রিক্সাটা তার ৩৬০ ডিগ্রী রেডিয়াসে কমপক্ষে ৩০০ মিটার জুড়ে দৃশ্যমান। সুতরাং, ড্রাইভার দেখেননি এটা হওয়া সম্ভব না। মোড় নেয়ার সময় ওনাকে কেন কিঞ্চিত ব্রেক করতে হোলো এটাই তার আপত্তি।

আমার সাথে ছিলেন বাবা। তিনি রিক্সা থামাতে গেলেন এবং এর প্রতিবাদ করতে গেলেন। আমার বাবা ১৯৭১ এ অস্ত্র হাতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। আমি তার ছেলে হয়েও এতটা মনোবল তৈরী হয়নি। বললাম, থাক দরকার কি ঝামেলা করার? ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথম যে চিন্তাটা আমার মাথায় এসে যাওয়াতে প্রতিবাদের মনোবল হারিয়েছি তাহল, প্রতিবাদ করলে এই লোকতো আমাকেও চড় মারা শুরু করতে পারে। আমরা সমাজে মান সম্মান নিয়ে বাস করি – তখন আমার সম্মানের কি হবে? কিন্তু যখনই রিক্সা আবার চলতে শুরু করলো, তীব্র অনুশোচনা আমাকে গ্রাস করলো। Read the rest of this entry

ওজন বেশি, কি করি?

mega_Burgerআমি কোনভাবে স্বাস্থ্যসম্পর্কিত কোন বিষয় অধ্যয়ন করিনি, এমন কি আমার পেশা বা ব্যক্তিগত পড়াশোনাও কোনভাবে  ধারে কাছেও এই বিষয়ের সাথে জড়িত নয়। এই পোস্টে কেবল আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। প্রতিটি মানুষ আলাদা, তাই এটা সম্পূর্ন নিজ দায়িত্বে পড়বেন। একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হওয়ায় অনেক সফলতা-ব্যার্থতা উঠে এসেছে, আশা করি এগুলোকে অহংকার বা হীনমন্যতা মনে করবেন না। যাদের অসুস্থতার কারনে অতিরিক্ত ওজন তাদের সাথে নিচের কথাগুলো মেলানো ঠিক হবেনা।

আমার ওজন ছিল ৮৭কেজি। আমি ৫ফুট ৭ইঞ্চির ছোটখাট মানুষ। আমার জন্য ৮৭কেজি বহন করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। অতিরিক্ত ওজন হওয়াটা অনেক ক্ষেত্রেই জেনেটিক। আমার নানার বংশে মোটামানুষে ভরপুর। পাশাপাশি আমি কম্পিউটারের সামনে দিনানিপাত করি। সারাদিন মস্তিষ্ক ব্যবহার করতে হয় বিরতিহীনভাবে। যে কারনে মস্তিষ্ক নিয়মিতভাবে ক্ষুধার অনুভূতিটা তৈরী করতো, আমার ‘সত্যি’ ক্ষুধা না লাগা সত্ত্বেও। এটা এক ধরনের আত্মরক্ষার মেকানিজম। মস্তিষ্ক চায় যেন আমি কোনভাবে আনপ্রোডাক্টিভ কোন ঘন্টা ভবিষ্যত ‘সত্যিকারের’ ক্ষুধার জন্য না কাটাই। তাই প্রো-অ্যাক্টিভলি সে আমার ফুড সাপ্লাই নিশ্চিত করতো। যখনই খেতাম, আমার মস্তিষ্ক হাই-এনার্জী ভাজাপোড়া খাবার খুব পছন্দ করতো। যেন খাবার থেকে প্রফিট ম্যাক্সিমাইজ করা যায় – খাওয়ায় অল্প সময় দিয়ে সবচেয়ে বেশি এনার্জী নিয়ে নেয়া। একটা সময় মনে হতে শুরু করেছিল, পৃথিবীতে মুরগী পাঠানোই হয়েছে আমার জন্য!

Read the rest of this entry

কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট পেশায় কম্পিউটার বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব

আমাদের ব্লগের মজার বিষয় হল আমরা যে কেবল ইসলামের মূল শিক্ষাকেই ছড়িয়ে দিতে চাই তা নয়, আমরা দৈনন্দিন মুসলিম জীবনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, জীবনযাপন বা মানব কল্যাণের সাথে জড়িত বিষয়গুলোও উপস্থাপন করবো। আমাদের মূল লক্ষ্য হল দীনের জ্ঞানের পাশাপাশি ইসলামসম্মত উপায়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কল্যাণের পথে দিক-নির্দেশনা দেয়া। তাই, কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট পেশায় কম্পিউটার বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব কতখানি তার বিষদ আলোচনা আমাদের ব্লগের আওতাভুক্ত।

আমাদের দেশে আইটিতে দক্ষ দলনেতার অভাব আছে। তার প্রমান হল, এত গুরুত্বপূর্ন একটা বিষয় লেখার কেউ নেই। দেশের আইটিতে একটা ধারনা প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে বলে অনেকদিন হল পর্যবেক্ষন করা যাচ্ছে যে কম্পিউটার বা সফটওয়্যার প্রকৌশলে সফল হওয়ার জন্য বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ার দরকার নেই। ওটা না পড়েই তারা যথেষ্ঠ উপার্জন করতে পারেন। তাই আর কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ার প্রয়োজন কী? সারা পৃথিবীতে যখন রাষ্ট্র এবং বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কম্পিউটার বিজ্ঞানে প্রসারের লক্ষ্যে তাদের ছাত্রছাত্রীদেরকে আরো বেশি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনীয়ারিং-এ পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে চলেছে, আরো বেশি বিনিয়োগ করে চলেছে এবং তারা তাদের দেশকে আরো বেশি জ্ঞান বিজ্ঞানে সামনে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে দক্ষ পথপ্রদর্শকের অভাবে এদেশের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভুলে পথে চলে যাওয়ার প্রবনতা শুরু হয়েছে। Read the rest of this entry

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি -৩ (কারণ, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

আসুন একটা ইতিবাচক অনুশীলন দিয়ে শুরু করি। স্মরন করে দেখি শেষ কবে আমরা কারও কাছে এমন কোন আচরন পেয়েছি যা পেয়ে আমাদের মনে হয়েছিল “আহা! কত ভালো।” বা, “আহা! ওই ছেলেটা/মেয়েটা কত উদার/নিঃস্বার্থ।”

আপনি লিফটের দিকে দৌড় দিচ্ছেন দেখে কেউ এসে বাটন চেপে লিফটের দরজা বন্ধ হওয়া থামালো। বা, আপনাকে দাঁড়ানো দেখে বাসে কেউ উঠে আপনাকে বসার জন্য জায়গা করে দিলো। এসব বলছি না। বলছি এমন আচরন, ব্যবহার, সম্মান আর উপকারের কথা যা পেয়ে আপনার মনে হয়েছে যে আপনি তার যোগ্য নন।

আমি তখন ভ্যাংকুভার থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। আমার অ্যালেন নামের ক্যাথলিক একজনের সাথে পরিচয় ছিল যে আমার ডাউনটাউনের বাসা থেকে প্রায় ২০০ কিমি দূরে থাকতো। সে রাতে ফোন দিয়ে বলল, তোমারতো কাল সকালে ফ্লাইট, গোছগাছের জন্য সাহায্য করতে আমি সকাল সকাল তোমার ওখানে হাজির হব। তার আগে কোন কাজ শুরু কোরো না। আমি বললাম, কি দরকার কষ্ট করার, আমি বেঁধে ছেদে নিতে পারবো। ও তাও জোড়াজুড়ি করলো। আমি ভেবে দেখলাম, ও যখন আসবেই, তাহলে আমি ভোরে উঠেই গোছগাছ করে রাখি যেন ওকে কষ্ট না করতে হয়।

সে ২০০ কিমি ড্রাইভ করে এসে আমার সব কিছু প্রায় তৈরী দেখে মোটামুটি ক্ষুব্ধ। আমাকে কোলাকুলি করে বলছে, তুমি অতি চতুর এজন্য তোমাকে আমরা (মানে ও আর ওর বউ) এত ভালবাসি। তারপর সে আবারও ঘ্যান ঘ্যান শুরু করলো যে সে আমাকে লিফট দেবেই। আমিতো কোনভাবেই রাজি না, বললাম একটা ট্যাক্সি নিলেই হবে। তোমার কেন কষ্ট করতে হবে, তোমারতো এমনিতেই আরও ২০০ কিমি ড্রাইভ করে ফিরতে হবে। সে কোনভাবেই রাজি না। সে বলল, তোমার সামান্য কাজে আমি আসতে পারবো না? Read the rest of this entry

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি – ২ (কারণ, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

সফল প্রচারের একটা লক্ষন হল কোন একটা বিষয় নিয়ে যেখানে প্রচার হয়েছে তার গন্ডির বাইরেও আলোচনা চলা। আগের পর্বের সা’দ ভাইয়ের কথা বলেছিলাম। যদি ওনাকে তখন সন্তষ্ট করতে পারতাম, হয়ত তিনি তার বন্ধুদের মধ্যে বা কোন আড্ডায় কুরবানী নিয়ে ইসলামের প্রজ্ঞা সম্পর্কে আলোচনা করতে পারতেন। সবচেয়ে বড় কথা, উনি অজান্তেই ইসলামের একজন অ্যাডভোকেট হয়ে উঠতেন।

সেদিন গ্রামীনফোনের অফিসে গিয়েছিলাম, দেখি বড় একটা বেলুন উড়ছে, তাতে লেখা আছে “Treat your customers the way you want to be treated.” সত্যিই তাই, ধরুন আপনি একটা প্রযুক্তি সেমিনারে আলোচনা শুনছেন, এখন আপনার পাশ থেকে কেউ যদি দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলা শুরু করে, এবং আপনার মনযোগ দাবি করতে থাকে, অবশ্যই তিনি আপনার বিরক্তির কারন হবেন। তাই, গৎবাঁধা একই উপায়ে রাস্তাঘাটে, মাঠে-ময়দানে, ফেসবুকে, আগ্রহী-অনাগ্রী, অপরিচিত পরিচিতদের মধ্যে শ্রোতার মানসিকতাকে যাচাই না করে এক নাগাড়ে কুরআন-সুন্নতের বৃষ্টিপাত আর ‘আপনি শিরক, বিদ’আত ও কুফরে লিপ্ত আছেন’ বার বার মনে করিয়ে দিলে কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনবে এমন আশা করা বোকামি হবে। যেকোন প্রচারের উপযুক্ত প্রেক্ষাপট, শ্রোতা ও পরিবেশ লাগে। ইসলামের মত অসাধারন একটা জীবনব্যবস্থা এই তিনটি শর্ত পূরন না করে প্রচার করতে গেলে তা অবমূল্যায়িত হয় এবং বিতর্কের দরজা খুলে দেয় বলে আমি মনে করি। যদিও সবসময় শর্তগুলো নিশ্চিত করা যায় নাঃ তাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। Read the rest of this entry

জাযাকাল্লাহু খাইরান সংস্কৃতি – ১ (আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম)

পর্ব ১: আপনি আমাদের আলোচনায় স্বাগতম
পর্ব ২: কারন, আমরা অনেক ভাল শ্রোতা
পর্ব ৩: কারন, আমরা অনেক উদার ও নিঃস্বার্থ
পর্ব ৪: তাহাদের কথা

একগাদা বন্ধু লাঞ্চ করতে বসেছি। বছরখানেক হল আমি বেশ কঠিন ডায়েটে চলছি। নিজের পাতের মাংস তাই সা’দ ভাইর পাতে তুলে দিয়েছি। তিনি বললেন, ও আচ্ছা, তুমিতো এখন ভেগান (vegetarian)। এই জন্যই কি দুধ চা দিতে মানা করলে?

আমি বললাম, আমি শুধু মাংস খাই না। দুধ, টুধ সব খাই।

সা’দ ভাই বলেন, তাহলে কুরবানীর সময় কি কর?

আমি বললাম, মাংস খুব কম খাই। কুরবানীতো মাংস খাওয়ার জন্য করি না। এটা ত্যাগের প্রমানস্বরুপ ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নত মেনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করি।

সা’দ ভাই বলেন, কুরবানী না দিয়ে টাকা দিয়েওতো ত্যাগ প্রমান করা যায়। পশু হত্যা করলাম না?

আমি বললাম, এখানে পশু হত্যা যদি নির্মমতা হয়, আপনি দেখবেন থ্যাঙ্কসগিভিংডে উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ টার্কি খাওয়া হয়, প্রতিনিয়ত মিলিয়ন মিলিয়ন চিকেন খাওয়া হয় – আমরাও খাই, কেএফসি, ন্যান্ডো’স এরাও আয়োজন করে আমাদের খাওয়ার জন্য। এই পৃথিবীর সবকিছুই পাঠানো হয়েছে আমাদের সেবার জন্য। আর যদি টাকা দিয়ে ত্যাগের কথা বলেন, সেক্ষেত্রে আমার জানা নাই। পড়াশোনা করে দেখতে হবে।

শফিক ভাই মোটামুটি মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলতে শুরু করলেন, না এর কারন আছে।

আমি ও সা’দ ভাই সাগ্রহে তার দিকে ফিরলাম ব্যাখ্যার জন্যে। সা’দ ভাই ইসলাম চর্চা না করলেও সব বিষয়ে জ্ঞানার্জনে তার ঝোঁক আছে। Read the rest of this entry