Category Archives: Parents

বকধার্মিক

আকাশে শান্তির নীড়ের প্রতীক বকের মত এহেন নিরীহ এক পাখির নামে কি বিশাল এক কলংক ‘বকধার্মিক।’ আচ্ছা, বক কি কারও বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে? উঠানে/বারান্দায় নেড়ে দেয়া কাপড় চুরি করে পালিয়ে গেছে? রাতের অন্ধকারে কারও হাঁস মুরগি খেয়ে গেছে? নাকি কারও ক্ষেতের কুমড়া খেয়ে সাবাড় করেছে? তাহলে, মুনাফেক্বী/হিপোক্রেসির সাথে বকের সম্পর্ক কি? বেচারা বক!

June_05_169_Medium

নাহয় বুঝলাম, বাংলা সাহিত্যিকেরা বককে ফাঁসিয়ে দিয়ে ভুল করেছেন, কিন্তু আমরা তাকে নির্যাতন করছি কেন? (স্যরি, নির্যাতন আজকাল বেশ বিখ্যাত একটা বাজ্জওয়ার্ড – না ব্যবহার করতে চাইলেও চলে আসে) ভন্ড, প্রতারক, নিমকহারাম, হিপোক্রেট, মুনাফিক্ব এসব না বলে বকধার্মিক কেন বলছি? সবকিছুকে হাল্কা করে দেখার ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত পারদর্শী। ভন্ডামির মত ভয়ংকর রোগকেও তাই আমাদের বকের মত নিরীহ প্রাণীর ওপর দিয়ে চালাতে হবে যেন জিনিসটা হাল্কা হয়ে উপেক্ষা করা সহজতর হয়।

সোশ্যাল মিডিয়াতে একে অপরকে নাস্তিক, আস্তিক, বকধার্মিক!, ইহুদী, খৃষ্টান বানিয়ে ছাড়ছি, সকাল থেকে দুপুর থেকে গভীর রাত। এদিকে ঘড়ি ছুটে চলে একের পর এক দিন শেষ করে দেয়, মুয়াজ্জিন আজানের পর আজান দিয়ে যায়, ওয়াক্তের পর ওয়াক্ত চলে যায়। ফেসবুককে কাছে পেয়ে নামাজ থেকে দূরে আছি। আর ইন্টারনেটে দেশে বিদেশে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করে গভীর রাতে ঘুমাতে হয়, ফজরের নামাজ পড়া কি সম্ভব বলেন? আসলেই কি ধর্ম প্রতিষ্ঠা/ধর্মের দিকে দাওয়াত দিচ্ছি? নাকি আমাদের ইগো প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে যাচ্ছি? এটা কি আদৌ ইন্টারনেট ভিত্তিক ধর্মকে জয়ী করার যুদ্ধ না নিজের ইগোকে? ইসলাম জয়ী হবেই আপনি ফেসবুকে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি করলেও না করলেও – সেই প্রতিজ্ঞা আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা নিজেই করেছেন। আমরা দৃষ্টান্তমূলক মুসলিম হতে না পারলে নিদেনপক্ষে ফেসবুকে ঝড় তুলে ইসলামকে জয়ী করানো যাবেনা।

আজান দেয়, মাথায় কাপড় দিব – কারন না দিলে লোকে বলবে ভালো ফ্যামিলি থেকে আসিনি, কিন্তু নামাজ পড়বো না। এখনকার মেয়েরা যদিও মাথায়ও কাপড় দেয় না শোনা যায়। আর যদি দেয়ও আজান দিলেই কেবল বাবার অনুরোধ মনে পড়ে কেন? “মাথায় কাপড় দে, মা।”  নিজের মেয়ের নগ্ন শরীর মানুষের চোখকে খাওয়াতে না পারলেতো লোকে আমাদের আধুনিক পরিবার বলবেনা। হিজাব পরালেও খুউউব টাইটফিট হিজাব পরাবো যতটা টাইট হয়ত নন-হিজাবিরাও এতটা পরে না। আমাদের যদি কোন ধারনা থাকতো, টাইটফিট হিজাবও ছেলেদের জন্য কত বড় জুলুম। Read the rest of this entry

আমাদের সময়ের অংশীদারঃ ২ – প্রিয় ফ্রেন্ড সার্কেল এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট

প্রথম পর্বটি পড়ে হয়ত আপনাদের মনে হতে পারে বেশ উপদেশমূলক কথা বলে ফেলেছি। সত্যি বলতে আপনি এখন যেভাবে আপনার সন্তানের সাথে আচরণ করছেন তার প্রভাব তার মধ্যেও পড়ছে এবং তা আপনি দেখতে পারবেন যখন সে কিশোর বা যুবক হয়ে উঠবে তখন। তাই বলে আমি বলছিনা আপনার মা-বাবার সাথে আপনি সে রকম ব্যবহার করবেন যেভাবে তিনি আপনার সাথে করেছেন। শুধু মা-বাবা কেন আমাদের সবার সাথেই উত্তম ব্যবহার করা উচিত।

আমি এই পর্বে মুদ্রার অপর দিকটি তুলে ধরতে চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। সন্তানরা তাদের মা-বাবার সাথে কিভাবে সময় ব্যয় করে থাকে, আর বুঝাতে চেষ্টা করব কেমন ব্যবহার করা প্রয়োজন।

ফেসবুকের একটা আপডেট পড়ুন – “I’m worried 4 my mom because she is hospitalized nd I’ve not seen her fm last 1 week”. এটা আমার এক বন্ধুর আপডেট, আর দুঃখের ব্যপার হল সে আমার পাশে বসে এই আপডেট দিয়েছে যখন তার মা শয্যাশায়ী। কারও মা-বাবা যখন অসুস্থ থাকে তখন সে কেমন করে ফেসবুকে বসে এইসব আপডেট দিয়ে অযথা সময় নষ্ট করতে পারে তা আমার বুঝে আসেনা! আমি তাকে বললাম – “তুই এখানে কি করছিস? আমাদের সাথে বসে আড্ডা আর ফেসবুকে আপডেট দিচ্ছিস, ছিঃ সুমন খুব খারাপ ব্যপারটা। আন্টির কাছে যা; কাছে থাকলে উনার ভাল লাগবে, সাহস পাবে।” তার উত্তরটি ছিল এরকম – “আম্মার কাছে গিয়ে আমি কি করব। বাসার অন্যান্যরা আছে ওখানে; আর হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্স তো আছেই ইমারজেন্সির জন্য।” আল্লাহু আকবর। Read the rest of this entry

আমাদের সময়ের অংশীদারঃ ১ – ডিজিটাল জীবন ব্যবস্থা

আপনি কি কখনো হিসেব করে দেখেছেন আপনার সময়ের সবচেয়ে বেশী অংশ কিভাবে ব্যয় করেন আপনি যখন ঘরে বসে অবসর সময় কাটান?

আসুন এই লেখায় দেখি একটি সন্তান কি ভাবছে। একজন শিক্ষিকা তার ক্লাসে সবাইকে একটা ওপেন এন্ডেড রচনা লিখতে দিলেন। বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য শিক্ষকরা এরকম অনুশীলন দিয়ে থাকেন। যখন শিক্ষিকা বাসায় নিয়ে লেখাগুলো নিজে পড়ছেন এমন একটি লেখা তিনি পড়লেন যা পড়ে উনার চোখের পানি থামবার নামই নিচ্ছিলনা আর তখন উনার স্বামী লেখাটা নিলেন পড়ার জন্য – বিষয়ঃ টেলিভিশন।

“আমার নাম ইব্রাহীম, আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। আমার বাসায় মা-বাবা ও ভাইবোন আছে, আমি তাদেরকে খুব ভালবাসি। আজ রাতে আমি আল্লাহ এর কাছে দুয়া করেছি আল্লাহ আমাকে তুমি ঐ টেলেভিশনের মতো বানিয়ে দাও। আমি এটার জায়গা নিতে চাই। আমি টিভি এর মতো আমার জীবন চাই। আমার জন্য একটি বিশেষ স্থান যেখানে আমার পরিবার আমাকে ঘিরে থাকবে। আমার কথা গুরুত্বের সাথে শুনবে কোনো বাঁধা বিপত্তি ছাড়া। আমাকে স্পেশাল কেয়ার নিবে যেটা আমার টিভি পায় যখন এটি নষ্ট থাকে। আমার বাবার সঙ্গ পায় যখন তিনি কাজের পর বাসায় আসেন অথবা তিনি যখন ক্লান্ত থাকেন এবং আমার মা আমাকে নিয়ে সময় কাটাবে যখন তাঁর মন খারাপ। এবং আমার ভাইবোনরা আমার সাথে সময় কাটানোর জন্য একে অন্যের সাথে লড়াই করবে। আমি চাই আমার পরিবার সব সময় আমার সাথে থাকবে এবং একইভাবে গুরুত্ব দিবে। সবশেষে আমি যেন তাদের আনন্দ আর খুশি দিতে পারি। আল্লাহ আমি তোমার কাছে বেশি কিছু চাইনা শুধু এই টেলিভিশন এর মতো হতে চাই।”

লেখাটি পড়ে উনার স্বামী বেশ আফসোস করে বলছেন “কি কষ্টেই না আছে এই ছেলেটি; আর এ কি ধরনের মা-বাবা”। তখন ঐ শিক্ষিকা বললেন “এই রচনাটি আমাদের সন্তানের লেখা!” কি আপনাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছি তাই না! Read the rest of this entry